Wednesday, July 9, 2014

অসিত বরণ চট্টোপাধ্যায়

জন্মভিটে

জন্মভিটে গো কতকাল দেখিনি তোমায়,
বহুকাল আগে প্রবাসী হয়েছি আমি
যৌবনের কর্মক্ষুধায়
মনে পড়ে------
কৈশোরের হারানো স্মৃতি,
সাতরঙা স্বপ্নের রামধনু
ঢেকে যায় অন্তহীন মৌন কুয়াশায়
কোলাহল মুখর বাড়ীর দরজা আজ
ক্ষুধিত ঘুণপোকা পাহারায়
বাড়ীটার সর্বাঙ্গে দগদগে ঘা,
জীর্ণ দেয়ালে অশ্বত্থের থাবা
কালপ্যাঁচা বেঁধেছে বাসা গাছের কোটরে,
সারারাত অভিসম্পাত পড়েনি নজরে
কোথা সে বকুলের বৈভব,কোথা
সে সন্ধ্যামালতির পুরানো সৌরভ,
উঠানের মাদার নিয়েছে শয্যা,
মালীহীন বাগিচা পেয়েছে লজ্জা
টুনটুনি মুনিয়ার লুকোচুরি খেলা
দেখতে পাই না সকাল সন্ধ্যেবেলা
কাকের কর্কশরব, স্মৃতি খানখান
হৃদয়ের রক্তচাপ বেড়ে যায় টানটান
পেয়ারা গাছ আর ডাকে না আমায়,
ডাকে না আম কাঁঠাল বন্ধ্যাত্বের লজ্জায়
রক্তকরবী ম্রিয়মাণ বয়সের ভারে,
শ্বেতকরবী মৃতপ্রায় পোকার আদরে
ডাকেনা শাপলা ঝিল, ডাকেনা তুলসীর বন,
যা ছিল আমার দুষ্টু কৈশোরের বৃন্দাবন
উদ্বাস্তু বিষধর করেছে জবর দখল
উঠোনের বেপরোয়া ঘাসের জঙ্গল
মাকে পড়ে মনে-----
লালপাড় গরদের শাড়ী গায়,
গলায় আঁচল,ধীর পায়, তুলসীতলায়
সন্ততি আর সুখীগৃহের মনস্কামনায়
বাজাতো শঙ্খ,জ্বালাতো সন্ধ্যাপ্রদীপ
নীরব হলো সে মা---হঠাৎ একদিন,
জ্বললো ধুপ,নিভে গেল জীবনদীপ,
নৈঃশব্দের কারাগারে আজ তুলসীতলা
ফাঁকিতে পড়েছি আমি জীবনস্রোতে,
ভেসে গেছে সবকিছু সময়ের স্রোতে

আমি নিরুপায়, প্রবাসে জীবন কাটাই
ধুসর জীবন সীমান্তের গান গাই
একা বসে ঠায়, ভগ্ন তুলসীতলায়
মনে ভাবি হায় সময়ের নৌকায়
সবকিছু চলে যায়, থাকে শুধু স্মৃতিটাই



0 comments:

Post a Comment