Wednesday, July 9, 2014

সুমন্ত চ্যাটার্জী



ভালো মানুষ

অনেক বড়ো শহর! কতো উঁচু উঁচু বাড়ি, কত কত মানুষ,

বাস-ট্যাক্সি-মোটরবাইক, মিষ্টির দোকান-হোটেল! সদর শহরে দাদার বদলি হতেই গ্রামের বাড়ি ছেড়েছিলামরেল কোয়ার্টারে বাবার কাছে সবাই একসাথে থাকবো,শহরে পড়াশোনা করবোহলুদ আলোর তলা দিয়ে হেঁটে গেছিলাম, চাকা-লাগানো বাক্স আর ভারী ব্যাগ কাঁধে নেওয়া দাদার পেছন পেছনদাদার বাঁ-হাতটা ধরে বোন ওর প্রিয় পুতুলটা নিয়ে নিয়ে খেলতে খেলতে গেছিল


রেল কলোনি থেকে সামান্য দূরের একটা ইস্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল আমাকেআমি ওখানে কারোর সাথে কথা বলতাম না।    রাতে খাওয়া-দাওয়া, প্রার্থনার পর দাদার পাশে শুয়ে মায়ের সাথে কথা বলতাম চুপচাপভিজে বালিশে কখন ঘুম

আসতো সকালে অবাক হয়ে ভাবতামবিকেলে ইস্কুল থেকে ফিরে অন্যদের খেলা
দেখতাম দূর থেকেএভাবেই বেশ কিছুদিন চলার পর একদিন আমায় ডেকেছিল একজন,
খেলার জন্যখেলেছিলামআস্তে আস্তে যতই ওদেরকে চিনেছিলাম, মজা বেড়ে
গেছিলবাবা বলেছিল রেল কলোনির ওদিকটাতে মোটা লোহার পাত লাগানো সীমানার
ওপারে না যেতেওদিকে নাকি ভয়ঙ্কর ভূতেরাথাকতো! আমি যাইনি কোনোদিন,
খেলা শেষ হলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতাম

         একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় দেখেছিলাম, কয়েকটা অচেনা ছেলে
মেধার সাথে খুব মারামারি করছেমেধা আমাদের সাথে খেলতো, তাই আমি ঐ
ছেলেগুলোর সাথে মারামারি করেছিলামছেলেগুলো চলে গেলে আনন্দ হয়েছিল, তবে
বাবার কাছে খুব বকুনি খেয়েছিলামমেধা আমার খুব ভালো বন্ধু হয়েছিল
প্রায়ই বাদাম নিয়ে আসতো আমার জন্যএকদিন ও আমাকে ওদের বাড়ি নিয়ে যেতে
চাইলোআমি গিয়েছিলাম কিছু রাস্তা, কিন্তু লোহার পাতের সীমানার ওপারে
যেতে চাইনিও কারণ জানতে চেয়েছিলবাবা যা বলেছিল সেটা ওকে বলতেই ও খুব
হেসেছিল


        এরপর বেশ কয়েকবার ইস্কুল ফাঁকি দিয়ে ওদের বাড়ি গেছিবেশ আলাদা
জায়গায় ছিল ওদের বাড়িটাকোলাহল-ভিড়, কেমন একটা গন্ধ, কেমন সব আলাদা কথার
মানুষমেধার মা খুব ভালোআমার সাথে কথা বলেছিল অনেক, আমিও অনেক কথা
বলেছিলামদাদা এটা জানতে পেরে খুব বকেছিল আমায়কেন বুঝিনিতারপর আরো
একবার গেছিলাম মেধার মায়ের কাছেএবার বাবার হাতে খুব মার খেয়েছিলাম
তবুও …! শেষমেশ আমাকে ভর্তি করে দেওয়া হল বোর্ডিং স্কুলে, “ভালো মানুষ
হওয়ার জন্য



0 comments:

Post a Comment