'চেয়ে আছ আকাশ জুড়ে'
অরূপম মাইতি
‘জানিনা তোমায় কেন মিথ্যে ভালোবাসি/সত্যি একটি
কল্পনামাত্র/একদিন আগুন কাটাবো সারারাত!’ – মাত্র তিন লাইনের একটি কবিতা। যে নবীন কবি এই কবিতা লিখতে পারেন, তিনিই আবার লিখতে পারেন,‘........অনিবার্য নিমজ্জন ও মৃত্যু/এটাই
যে সবচেয়ে বড় বাস্তব আমার কাছে/আমার নিঃশ্বাস তোমার পলকে ছন্দে পড়ে-/এর পরেও
বলবে বাস্তব নয়, রোমান্টিক!’ (কাব্যগ্রন্থের পাঁচ নম্বর কবিতার শেষ চার
লাইন)।
কবি
মৌমিতা ঘোষের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘চেয়ে আছ আকাশ জুড়ে’ নিয়ে আলোচনা করতে বসে, অনেক ভাবনার পর মনে হল কবি তার
কাব্যগ্রন্থের যে নাম দিয়েছেন, সেটাই এই নিবন্ধের যথোপযুক্ত নাম হতে
পারে। জন্ম ২১শে মার্চ, ১৯৭৮। পেশায় কর্পোরেট ট্রেনার মৌমিতা
ছোটবেলা থেকে লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত। বন্ধুদের সঙ্গে পত্রিকা প্রকাশ করা আর নিয়মিত
নতুন কবিতা কে কি পড়ল, তা নিয়ে আলোচনা করে কেটেছে আবাল্য
কৈশোর ও যৌবনের রঙিন বছরগুলো। নিজস্ব একটি কবিতার বই কখনও সেরকম ভাবে ভাবা হয়ে ওঠেনি।
এই বইটিও
হয়ত প্রকাশের আলো দেখত না, যদি না বন্ধুরা জোরাজুরি করত। সেই বন্ধুরা, ‘কবির কথা’-য় কবি সযত্নে যাদের নাম উল্লেখ করে
গেছেন – সেই ঈপ্সিতা, সৌমি, নীলাঞ্জনা, রশ্মি, মলি, রিমা, আবীরা। কবি স্বীকার করেছেন এই বন্ধুদের সঙ্গে ছোট
ছোট ঝগড়া, খুনসুটি, অনুভূতি বা কখনও বিশেষ কোন আলোচনা
থেকেও দৈরি হয়েছে অনেক কবিতা। কবি অকপট, তাই বলতে পেরেছেন, ‘সবচেয়ে সত্যি/সে আমার দুঃখ।/যে আমাকে রাতভোর জাগায় কবিতায়/যে
আমাকে কিছুতেই তোমাকে পাওয়ার আশা ছাড়তে দেয় না...’কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতার প্রথম
কয়েকটি লাইন)।
‘যখন তোমার দু চোখ/ডুবে থাকে অতল সৃষ্টিতে/আমার ক্যানভাস হতে
ইচ্ছে করে...’ ইচ্ছেডানার সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর
বাঙ্ময়তা। ‘অথবা কেন তাকালে ও ভাবে?/আমার নিশ্চিন্ত মরণ হল।….’ --প্যাশনের এও এক রূপ। ‘তুমিই একতরফা চালাও শাসন।/উপেক্ষা ও ভালোবাসার পালাবদল/টেনে নাও
একেবারে কাছে-....’ –হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে নিংড়ে ওঠা
আবেগের এক রূপ। ‘চার অক্ষরের একটা শব্দ/আমাকে সুখে
রাখে – পালে হাওয়া লাগায়...’ কাতর অথচ স্পষ্ট এক স্বীকারোক্তি।
প্রকৃতি কবির
কাছে খুবই আপন। তা না হলে কি এমন করে বলা যায়, ‘একটা ভেজা দুপুর।/বাইরে ধুসর বৃষ্টি।ঝাপসা ডালপালা/আর ভিতরে? সবুজ বৃষ্টি-...’ । অথবা ‘আবেগে আর শীৎকারে মাখামাখি দুপুর/শেষ
দুপুরের নরম রোদের মত/তুমি নিজেকে বিছিয়ে দিলে আমার উপর...’।
কবির
কাছে তার ছোটবেলাও যে কত আদরের, তা বোঝা যায় তার এই কবিতা থেকে, ‘জানলার বাইরে প্রবল বৃষ্টি/ঝাপসা
কাঁচ-/প্রতি মুহূর্তে জলের ছবি বদলে যায়।/সবাই খুশি, খিচুড়ি-মাছভাজা/সবাই খুশি, রেনিডের ছুটি...’ । তার পরম পছন্দের তালিকায় আছে বৃষ্টি। ‘বৃষ্টি কেমন করে/মন খারাপের
তেলচিটে/ঘষে ধুয়ে/ঝলমল হতে পারে....’। অথবা ‘বৃষ্টি বরাবরই সব ধুয়ে দেয়-/চোখের
জলের দাগ-...’।
সম্পূর্ণ
কাব্যগ্রন্থটি মোট দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘আকাশের দুটি তারা’। পরের ভাগের নাম ‘বোগেনভেলিয়া আর নীলাঞ্জনারা’। প্রথম ভাগে রয়েছে মোট চল্লিশটি কবিতা। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে মোট পনেরোটি কবিতা। কাব্যগ্রন্থটি কেন এরকম দুই ভাগে ভাগ
করা, তার উত্তর নিশ্চয় কবির কাছে একদিন
জানতে চাইব। আপাতত কবিতার বইটির নামটি অনুসরণ করে
বলতে চাই, থাক তুমি কবি ‘...... আকাশ জুড়ে’।
সুন্দর প্রচ্ছদ সহ
বইটির প্রকাশ করেছেন, যোগমায়া প্রকাশনী, ৬০ পটুয়াটোলা লেন, কলকাতা – ৭০০ ০০৯। বিনিময় মূল্য ৬০ টাকা। কলকাতা ও শহরতলির সব পুস্তক বিপণিতে বইটি
পাওয়া যাচ্ছে। তবে কবির স্বাক্ষরসহ বইটি
কবির থেকে স্বহস্তে গ্রহণ করতে চাইলে, +91-9836573338 নাম্বারে ফোনবা moumitacghosh@gmail.com আইডিতে
ই-মেল করা যেতেই পারে।
0 comments:
Post a Comment