Thursday, December 25, 2014

ছোটগল্প ৪

চিঠি
দে ব  না রা য় ণ  শ ত প থী

-মায়া শুধু মায়া, বুঝলে  রানু এ তুমি বুঝবে না।

-যাও তো আমাকে আর বোঝাতে  হবে না।

মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠেন রানু- আদ্যি কালের বদ্যি বুড়োর মতো যত পুরনো জিনিস আঁকড়ে ধরে যখের মতো বসে থাকো।

হো হো করে হেসে ওঠেন তপেন্দু- বেশ বললে কিন্তু। কিন্তু জানো রানু আমি যদি বিখ্যাত ব্যক্তি হতাম তাহলে এগুলো দিয়েই একটা মিউজিয়াম গড়ে উঠত।

কথা হচ্ছিল তপেন্দুর একটা পুরানো তোরঙ্গ নিয়ে। রাজ্যের পুরানো জিনিস বোঝাই করা তাতে। ছেলেবেলার লাট্টু গুলতি কৈশোরের স্কেচ বই উদ্ভিন্ন যৌবনা নায়িকার ছবি ডায়রি পৈতেয় পাওয়া হাতঘড়ি সবকিছুই মজুত সেখানে। চাকরী জীবনের শেষ প্রান্তে ছোট মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। নতুন বাড়িতে ওঠার আগে রানু বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন ওই তোরঙ্গ টা। কিছুতেই রাজী হন নি তপেন্দু। বলেছেন- আমার সব সুখ এটাতে বন্দী। এটা ফেলে গেলে আমার সব সুখ হারিয়ে যাবে।

সুখের আধার রয়ে গেল, মানুষটা রইল না। নতুন বাড়ীতে আসার কমাসের মধ্যে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। সব শেষ। সবাই চলে গেছে। মেয়েরা চলে গেছে তাদের বাড়িতে। নিয়ে যেতে চেয়েছিল। রানু রাজী হন নি।

এক নির্জন দুপুরে কি মনে হতেই রানু তোরঙ্গখানা খুলে বসেন। কত জিনিসই যে আছে তাতে। একটা রংচটা হাতঘড়ি। প্রাইস ট্যাগের মতো একটুকরো কাগজ আটকানো প্রথম ঘড়ি, ছোট মামার দেয়া। উপনয়নে পাওয়। তাং.........। কত ডায়েরি। আনমনে তারই একটা তুলে নিলেন রানু। পাতা ওলটানোর আগেই একটা খাম মেঝেতে পড়ল। অনেক আগের রঙিন খাম। সবিস্ময়ে রানু দেখলেন খামের ওপর তাঁরই নাম লেখা। নিচে পাদটীকার মতো লেখা রানুকে লেখা একমাত্র চিঠি।পোষ্ট করা হয় নি। কি অদ্ভুত মায়াবী রোমান্টিকতায় ভরা দীর্ঘ পত্র। এক ভাবী স্ত্রীর উদ্দেশ্যে এক যুবকের স্বপ্নময় কাব্য গাথা।

পড়তে পড়তে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে রানুর চোখে। বহুদূর থেকে ভেসে আসে রফি সাহাবের সেই গান .........লিখে যো খত তুঝে............।।.




0 comments:

Post a Comment