Saturday, October 17, 2015

সোহম দাস

ডাক কন্যা


      আপনি গাড়িতেই বসুন কিছুক্ষণ   আমি দেখে আসি মিস  চাকী বাড়ি আছেন কিনা  ’’ এই বলে পরিমল সরকার  চলে গেল  আমি বসে  রইলাম ট্যাক্সির মধ্যে   সিগারেট প্যাকেটটা  বার করেও ধরালাম না   ইচ্ছা করল না  মনটা  কেমন একটা করছে ! জানি  আর আবেগকে জায়গা দিলে  হবে না  তাও মধ্যবিত্ত  বাঙালি কালচারের ভূতটা  জ্বালাচ্ছে বড্ড  নিজের  মনেই হাসলাম একবার   প্রশান্ত রায় আজকে হার  মানবে না কিছুতেই   ইমোশনাল, রিফাইন্ড, রুচিশীল  এইসব শব্দগুলোকে সে যতটা  সম্ভব দূরে রাখবেই   কাম অন, প্রশান্ত, ইউ হ্যাভ  টু ডু ইট !
       -চলে আসুন, মিঃ রায় ’’
       মিঃ রায় ! হুঁঃ, শালা এমন  ডাকছে যেন দিনে শালা  চোদ্দ বার সেলাম ঠোকে ! পরিমল  সরকার, ওই শালা ধড়িবাজ  পরিমল সরকার ! কেন জানিনা, ওকে এই মুহূর্তে খুন  করতে পারলে বেশি ভালো  লাগত আমার  তবে এও জানি, এই ঘোড়েলটাকে হাতে না রাখলে আমার পথে বসা বেশিদিন দেরী নেই । বাক্যব্যয় না করে ট্যাক্সির দরজা খুলে নেমে পড়লাম ।
       হাতঘড়ি বলছে, রাত সওয়া  আটটা  রাতই বটে ! স্ট্রীট  ল্যাম্পগুলো না জ্বললে  আরও নিশুত মনে হত   বর্ষায় প্যাচপেচে কাদা  জমে আছে  খোলা নর্দমা  থেকে উঠছে পচা গন্ধ   নাক ঝাঁঝিয়ে দেয়   সরকার বলল, নর্দমার পাশ  থেকে সরে হাঁটুন ’’
       মুখে কিছু না বললেও  মনে মনে বললাম, নর্দমার  মধ্যেই তো নিয়ে যাচ্ছ  শালা আমাকে ’’
       পরিমল সরকার ঝানু লোক   বোধহয় বুঝতে পারছিল, আমার মনের অবস্থা   বলল, স্যার, আপনি এত টেনশন  নিচ্ছেন কেন বলুন তো ! এসব কোনও ব্যাপারই না ! আপনি জাস্ট যাবেন   কথাবার্তা বলবেন  আর  রেটটা ঠিক করে নেবেন   ব্যস !
       হুম ! বলে চুপ করে  গেলাম আমি  রেট ! একটা  মানবদেহেরও দাম হয়   আমাদেরই মত রক্তমাংসে  সুনিপুণ ভাবে গড়া একটা  মানবদেহ  তারও রেট  হয়  অর্ডার সাপ্লাইয়ের  ব্যবসার মত রেট নিয়ে  কষাকষি হয় ! ওই শালা পরিমল  এত ভাববে না ! ও শালা  বোঝে শুধু পয়সা ! আর আমার  মনে কত গ্লানি  একবার  নামতে শুরু করলে কি  ওঠা এতই কঠিন ! ভাবছিলাম  আমি ! না, এসব প্রশান্ত রায় ভাববে না ! কিছুতেই না ! অন্তত আজকের দিনটা নয় !
       একটা অন্ধকার গলির মধ্যে  ঢুকে পড়লাম  চতুর্থ বাড়িটায় এসে গেট খুলে ঢুকে পড়ল পরিমল । চারতলা বাড়ি । ফ্ল্যাট । তিনতলার উঠতে উঠতে পরিমল বলল, বুঝলেন মিঃ রায়, এই যার কাছে নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে, মানে মিস মৃণালিনী চাকী তিনি এই লাইনে হেবি ফেমাস মহিলা । কত মার্কামারা বড় বড় ভি আই পি ওর হাতের মুঠোয় । ওর হাতে এক-একজন যা পিস আছে না, চিন্তা করতে পারবেন না । মানে টপ কোয়ালিটি মেটিরিয়াল আপনি পাবেন !
       আপনি পাবেন শুনেই মাথায়  রক্ত চড়ে গিয়েছিল   যোগব্যায়াম করার অভ্যাস  ছিল এককালে, বুঝলে হে  ধড়িবাজ সরকার  এখনও  বাইসেপ ফোলালে লোকে সমীহ  করবে  তার একটা পাঞ্চ  যদি খেতে চাঁদু, তোমার  ভবলীলা এখানেই সাঙ্গ  হয়ে যেত ! কিন্তু ভগবান  যে কি নিয়তি রেখেছিল  আমার কপালে, তোমার হাতেই  ঝুলে আমার দেড় লাখের  কন্ট্র্যাক্ট ! আমি পাব  মানে ? কি বলতে চান ?
       পিত্তি-জ্বালান দেঁতো হাসিটা  হেসে জিভ কেটে সরকার  বলল, ছিঃ ছিঃ ছিঃ, আমি  ওকথা বলিনি  মানে পার্টির  জন্যে দরকার হলে আর  কি !
       -ও !
       -তা বুঝলেন, এই মহিলার  আবার একটু বাতিক আছে   মোবাইল ইউজ করেন না । একটা ল্যান্ড আছে তা সেটা সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার আগে পাওয়া যাবে না । তাই তো ফোনে পাইনি । তাই এসে আপনাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে দেখে গেলাম আছেন কিনা ! আরও আছে, আজকাল সব মোবাইলে দেখানো হয় সব মুরগিদের আপার পোর্শান, ইনি আবার দেখান অ্যালবামে !
        -হুম !
        আমি খুব একটা উৎসাহিত  নই দেখে, সরকার চুপ করে  গেল  মুরগি ! হুঁঃ !  মনে মনে বললাম  তিনতলায়  এসে দেখলাম দুটো দরজা   সরকারের দিকে তাকাতে   বলল, দুটো ফ্ল্যাটই  ওনার  তাই একটা দরজা  বুজিয়ে দিয়েছেন !
        কলিংবেল নেই  টোকা   দরজা খুলে দিলেন এই  লাইনে হেবি ফেমাস মহিলা   হাসিমুখে অভ্যর্থনা  করে বসতে বললেন ! পরিমল  আবার সেই রকম হেসে হাত  ঘষতে ঘষতে বলল, তা, মিস  চাকী, বিজনেসের কি খবর ?
        মিস চাকী বিরক্ত হয়ে  বললেন, আপনি সবসময় একই প্রশ্ন কেন করেন বলুন তো !
        মিস চাকীকে কেন জানিনা  আমার খুব চেনা লাগছিল   কোথায় যেন দেখেছি ! পরিমল  হাত কচলাতে কচলাতে হেঁ-হেঁ  করে বলল, যাই বলুন মিস  চাকী, এবার কিন্তু আপনাকে  একখানা মোবাইল নিতেই  হবে  আজকেই ধরুন, আজ  আমাদের সাড়ে সাতটার পরে  ফোন করার স্কোপ-ই ছিল  না  ডিরেক্ট চলে আসতে  হল ! ভয়-ও ছিল, আপনি থাকবেন  কিনা !
        মিস চাকী বললেন, নাহ  মিঃ সরকার, মোবাইল এলে  কলের জ্বালায় টেঁকা যাবে  না ! ও যেমন ল্যান্ড ইউজ  করছি, তেমনই থাক গে ! বাই  দ্য ওয়ে, এবার দরকারটা  বলুন ! ইনি কে ?
        পরিমল কাজে লেগে গেল ! বলল, , হ্যাঁ, পরিচয়টা করিয়ে  দিই ! ইনি মিঃ প্রশান্ত  রায়  রায় সাপ্লায়ার্সের  মালিক ! তা আপনার এখানে  আসার কারণটা তো বুঝতেই  পারছেন ! তা ফাঁকা আছে  কেউ ?
        মিস চাকী আমার দিকে  চেয়ে প্রথমে একটা নমস্কার  করলেন ! তারপর চশমাটা তুলে  বললেন, তা কিরকম পছন্দ  আপনার ?
        পরিমল হাঁ-হাঁ করে উঠে  বলল, উনি নন, উনি নন ! ওনার  একজন পার্টি ! রয়্যাল প্যালেস  ইনে !
        -তা পার্টির চয়েস কিরকম  মানে ডিটেলস আছে তো  নিশ্চয়ই ?
        হুম ! তা আছে ! আমার মোবাইলের  ইনবক্সেই ! যত কম কথা বলা  যায়, সেই চেষ্টা করছি ! তাই  মেসেজটা বার করে মিস  চাকীর দিকে এগিয়ে দিলাম   মিস চাকী একবার পড়ে  নিয়ে ফিরিয়ে দিলেন মোবাইলটা ! পরিমল লক্ষ করছে আমাকে ! আমি যতটা সম্ভব স্বাভাবিক  থাকার চেষ্টা করছি !
        মিস চাকী উঠে গিয়ে একটা  কাঁচের আলমারি থেকে একটা  অ্যালবাম বার করে এনে  আমার সামনে মেলে ধরলেন ! সার সার মুরগিদের আপার  পোর্শান-এর ছবি ! মুখের  ছবি নেই ! শুধু ঊর্ধ্বাঙ্গ   বক্ষ, কটি, নিতম্ব । সঙ্গে ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স । আমি দেখতে পারছিলাম না ! চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আমার । তাও সব ঠিক হত, যদি না মনে পড়ে যেত বহুদিন আগের সেই স্মৃতিটা । বন্ধ ঘর । বছর তেইশের সন্ত্রস্ত যুবক ! সামনে দেখছে প্রেমিকাকে খুব ধীরে নগ্ন হতে । উন্মুক্ত বক্ষ-বিভাজিকার আন্দোলন ! শিরায় ঠাণ্ডা রক্তস্রোত !
        না, নয়না, তোমার সুডৌল, সুতন্বী  ছবিটা আমার সামনে এনো  না ! আমি আজ শেয়াল হয়ে  গেছি ! এনো না, এনো না ! নয়না, তুমি সরে যাও ! সরছ না  যে ! একদম তাকাবে না ওভাবে  আমার দিকে ! টাকা নেই বলে  সেদিন চলে গিয়েছিলে, আজ  এসেছ সাবধান করতে ! সরে  যাও, নয়ত খুন করে ফেলব  তোমায় ! না, তুমি খুন হয়ে  গেছ অনেকদিন, অ-নে-ক-দি-ন, আমার  মন থেকে ! আজ নতুন করে  আসবে না তুমি !
        মিস চাকী বোধহয় বুঝছিলেন, আমি হারিয়ে গেছি কোথাও ! গলা খাঁকড়িয়ে বললেন, মিঃ  রায় ?
        চমকে উঠলাম  বলুন !  গলার স্বর অচেনা ঠেকল !
        -পছন্দ হল না ?
        -না, মানে...
         ভালো করে দেখিনি কিচ্ছু ! না কেন বললাম জানি  না ! তবে মিস চাকী আমার  হাত থেকে ওটা কেড়ে নিয়ে  ভেতরে চলে গেলেন ! মধ্যবিত্ত  মানসিকতাটা আবার জ্বালাচ্ছে   প্রশান্ত, একটা সুযোগ  পেলে পালানোর ! আর পাবে  না ! এখনও সময় আছে, পালাও, পালাও ! 
         না, প্রশান্ত রায় আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, জীবনে প্রথমবার, আজ সে  হারবে না ! আমি যেন চিৎকার  করে উঠলাম, না, তুমি জ্বালাতে  আসবে না আমায় ! একাজ আমায়  করতেই হবে ! শ্রীধরকে খুশি  করলেই বছরে দু-লাখ টাকার  কন্ট্র্যাক্ট ! দু লাখ অনেক  টাকা আমার কাছে ! তুমি  জানো না, আমার বাবা শয্যাশায়ী, বাড়িওয়ালা কাল ফাইনাল  নোটিশ পাঠিয়েছে, মা আমার  দিকে চেয়ে বসে আছে ? তুমি  সরে যাও, সরে যাও, নয়ত খুন  করে ফেলব তোমাকেও !
         মিঃ রায় ! পরিমলের গলা ! আমি তাকালাম ওর দিকে ! ও বলল, যা করবার তাড়াতাড়ি করুন ! সাড়ে নটায় তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট !
         আবার একটা হুম ছাড়া  আর কিছু বেরল না !
         আবার একটা অ্যালবাম আমার  সামনে ! সেই সার সার ছবি   মুখ নেই ! কিন্তু সত্যিই  কি নেই ! হ্যাঁ, আমি দেখতে  পাচ্ছি ! সকলের মুখে পৈশাচিক  হাসি ! প্রশান্ত রায়, কাম  অন, ডু সামথিং ! না, এবারও  না বললাম  সরকার  অবাক চোখে তাকিয়ে আছে   সে বলল, আপনার ফ্ল্যাটে  আজকে...
         -না, আজ কেউ খালি নেই  ফ্ল্যাটে ! সবাই বুকড ! খালি  থাকলে কি আর আপনাদের  ফোটো দেখাই ! আচ্ছা, মিঃ  রায়, হাউ মেনি মিনিটস  ডু ইউ হ্যাভ ?
         ঘড়ি দেখে বললাম, আধঘণ্টা !
         আচ্ছা, দাঁড়ান ! বলে মিস  চাকী ভেতরে চলে গেলেন   কারও সাথে কথা বললেন  ফোনে ! তারপর ফিরে এসে  বললেন, একজন আসছে ! যেরকম  চাইছেন, অলমোস্ট সেম ! তবে  রেটটা একটু নর্মালের থেকে হাই হবে । আসলে আমারই চেনা এক ক্লায়েন্টের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল ওর । আমিই আপনার জন্যে বললাম । তাই একটু আরকি...দশ মিনিটের মধ্যে এসে যাবে ! ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে । আপনি একটু বসুন !
         কথাগুলো বেশ পরিতৃপ্তির  সাথে বললেন মিস চাকী ! তারপর বললেন, আজকে রেকর্ডে  লাল কালি পড়ে যাচ্ছিল  প্রায় ! আমার কাছে এসে  পার্টি ফিরে যাবে   জিনিস জীবনেও ভাবতে পারব  না ! কি বলুন, মিঃ সরকার ? আমার কাছে এসে কোনোদিন  নিরাশ হয়েছে কেউ কখনও ?
         সেই পিত্তি-জ্বালান হাসি  শালা সরকারের ! হে হে  হে, না না ! তা কি হয় ! আপনি  হলেন দশভুজা !
         -আর লজ্জা দেবেন না !
         সেই হতভাগা আবার জ্বালাতে  শুরু করেছে দেখছি ! প্রশান্ত, হাতে এখনও সময় আছে দশ  মিনিট ! এখনও বলছি পালাও  এই নরক থেকে !
         চুপ কর শালা তুই ! নরক ! হ্যাঁ, শালা নরকেই যাব  আমি ! সেজন্যেই তোকে বর্জন  করেছি ! ধমকে থামালাম  ওটাকে !
         বসে আছি  দশ মিনিট  পরেই আসবে সে ! আমার গিনিপিগ ! আর আমি শালা শেয়ালের  মত বসে আছি ওঁত পেতে ! এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ব ! একি, প্রশান্ত রায়, কাঁপছ কেন ! বি স্টেডি !
         এমন সময় দরজায় টোকা ! মিস  চাকী উঠে গেলেন দরজা  খুলতে ! তারপরেই তাঁর গলার  আওয়াজ ! বাঃ, এই তো বসনা  এসে গেছিস ! চল, ভেতরে ওয়েট  করছে !
         দুজন মানুষ সামনে এসে  দাঁড়াল  মিস চাকীর  গলা, মিঃ রায়, দেখে নিন ! আর রেটটা বুঝে নিন !
         হ্যাঁ... বলে তাকালাম  গিনিপিগের দিকে  হৃৎস্পন্দন  থেমে গেল, পায়ের তলার  মাটি সরে গেল, অসাড় হয়ে গেল সারা শরীর-আরও যা যা বর্ণনা থাকতে পারে সব মেলালেও বোধহয় পুরোটা বোঝাতে পারব না ! সেই বন্ধ ঘরে তেইশের যুবক ভয় আর বিস্ময়ের চোখে যে নারীমূর্তিকে নগ্ন হতে দেখেছিল, সেই আজ গ্রীক উপকথার রাক্ষসী মেডুসার রূপ ধারণ করে এই প্রশান্ত রায়, রায় সাপ্লায়ার্সের মালিক প্রশান্ত রায়কে, পাথর করে দিয়েছে ! কিন্তু মেডুসাও পাথর হয়ে গিয়েছিল বোধহয় ! আর এদিকে সেই শালা হাসছে ! কি, তখনি বলেছিলাম পালাতে ! এখন কেমন লাগছে ! হা হা হা হা হা...
         ধমকে থামাতে চাইলাম পারলাম  না ! ঝাপসা চোখে দেখলাম, নয়নাই আগে সচল হল, দুহাতে  মুখ ঢেকে পালাল ! ঘরের বাকি দুজন হতভম্ব ! প্রাণপণে উঠে পড়লাম সোফা থেকে । দরজাটা খোলা ছিল ভাগ্যিস ! সিঁড়ি দিয়ে নামছি ! শুনতে পেলাম সরকার মিস চাকীকে সাফাই দিচ্ছে, মাথাটা একটু ইয়ে...
         ফোটোর নারীদেহগুলোয় মুখ  চলে এসেছে ! সকলের মুখে  নয়না ! পৈশাচিক হাসি হাসছে ! রাস্তায় নেমেও ছুটছি ! খেয়াল ছিল না  কাদায়  পা পিছলে পড়ে গেলাম ! গোটা  জামা, প্যান্ট মাখামাখি  হয়ে গেল কাদায় ! হতভাগা  সরকারটা ঠিক পিছু পিছু  চলে এসেছে ! তুলতে গেলে  এক ঝটকায় সরিয়ে দিলাম  হাত  খবরদার, আমার গায়ে  হাত দেবেন না !
         কাদা লেগেছে, অনেক কাদা ! লাগুক শালা, আরও লাগুক ! আরও কাদা রাস্তা থেকে  তুলে লাগাতে লাগলাম জামায়, প্যান্টে ! সরকার বলল, স্যার, কি হল ! ওভাবে চলে এলেন ! স্যার...
         শাট আপ ! এত জোর চিৎকার  করব নিজেও ভাবিনি !
         সরকার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে  গেল  কিন্তু শালার  গাঁটে গাঁটে শয়তানি ! বলে, আপনার কন্ট্র্যাক্ট ? আমার কমিশন ?
         পকেট থেকে মানিব্যাগটা  বার করে তা থেকে তিন  হাজার বার করলাম  মায়ের  গয়না বন্ধক দিয়ে পঁচিশ  হাজার নিয়ে এসেছিলাম  সঙ্গে করে ! সরকারের মুখে  প্রায় ছুঁড়ে মারলাম ওটা ! বললাম, এর বেশি চাইলে  খুন করে ফেলব ! নিজের চোখ না দেখতে পেলেও বুঝছিলাম, সেখান থেকে লাভা বেরোচ্ছে গলগল করে ! তাই পাঁচ হাজারের জায়গায় তিন হাজার পেয়েও চুপ করে গেল সরকার ।
         -আর আপনার কন্ট্র্যাক্ট ?
         -চুলোয় যাক কন্ট্র্যাক্ট ! শ্রীধরকে বলে দেবেন, প্রশান্ত  রায় ব্যবসা তুলে দিয়েছে ! আর ফর গড সেক, আমাকে  আর কোথাও যেতে বলবেন  না !
         এই বলে হাঁটা লাগালাম   পাশ দিয়ে ট্যাক্সি  নিয়ে বেরিয়ে গেল সরকার   শালা ! মুখ দিয়ে  কথাটা বেরিয়ে গেল এমনিই   

বাড়ি যখন ফিরলাম রাত একটা ! কোথায় কোথায় ঘুরেছি কিচ্ছু মনে নেই ! ফিরে দেখি, মা তখনও খাবার চাপা দিয়ে বসে আছে । বললাম, খাব না ! ইচ্ছে নেই !
         কাদা দেখে মা বলল, একিরে, জামাটার একি অবস্থা   ছেড়ে রাখ এখানে ! কালই  কাচতে হবে দেখছি  পড়ে  গেছিলি বোধহয় !
         - কাদা কাচলেও যাবে  না মা !
         -কি যে বলিস ঠিক নেই !
         জামাটা ছাড়লাম ! প্যান্টটাও ! মা জামাপ্যান্টটা নিয়ে  বাথরুমে বালতিতে ডোবাতে  যাচ্ছিল  আমি কেড়ে  নিলাম   জামা বড়  অপবিত্র  মায়ের সুন্দর  পবিত্র হাত দুটো এতে  লাগলে অপবিত্র হয়ে যাবে ! মা অবাক হল আমার ব্যবহারে ! বলল, তোর শরীর ঠিক আছে  তো ?
         -ঠিক আছে ’’ 
         -তোর কন্ট্র্যাক্টের কি  হল, খোকা ?
         -কন্ট্র্যাক্ট ?
         -হ্যাঁ, আজ সকালেই যে  বললি বড় একটা কন্ট্র্যাক্ট  পাবি !
         -, হুম !
         -সেটা পেলি ?
         মায়ের মুখটা দেখলাম   অনেক আশায় উজ্জ্বল ! ছেলে  কন্ট্র্যাক্ট পাবে, পেয়ে  সব কিছু ঝামেলা মেটাবে ! না-টা বলতে গিয়েও পারলাম  না ! পেয়েছি...পেয়েছি কোনও  মতে বলে ঘরে ঢুকে দরজাটা  বন্ধ করে দিলাম !
         আমি যে আজ বড় নোংরা হয়ে গেছি মা !






0 comments:

Post a Comment